বিরামপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের বিরামপুরে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আমন ধান কাটা-মাড়াইকে ঘিরে যখন গৃহস্থ পরিবারে উৎসব চলছে, তখনো ভূমিহীন অভাবী পরিবারগুলো থাকছে না খেয়ে। তাই এসব পরিবারের শিশু-কিশোররা খুঁজে বেড়াচ্ছে কৃষকের কেটে নেওয়া ধানক্ষেতে ইঁদুরের গর্ত। ইঁদুরের সংগৃহীত ধান উদ্ধার করে এক বেলা খাবার কিংবা বছরে অন্তত এক দিন পিঠা খাওয়ার স্বপ্ন দেখে ওরা। একারণে অনেকে আমন ধান কাটার এ মৌসুমে স্কুলে না গিয়ে দিন পার করছে ফসলের মাঠে ইঁদুরের গর্তের ধান সংগ্রহে।
শনিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, যাদের নিজস্ব জমি নেই কিংবা কোন জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেননি তারাই এসব ধান কুঁড়িয়ে তাদের শখ বা আশা পূরণ করে থাকেন। চলতি আমন মৌসুমে ধান কাঁটা-মাড়াই শুরু হওয়ায় তাদেরও উৎসব শুরু হয়েছে। কোথাও কৃষক তার ধান কেঁটে নেয়ার পর ফসলের মাঠ জুড়ে পড়ে রয়েছে ধান গাছের গোড়ালী যা স্থানীয় ভাষায় নাড়া বলা হয়। গোড়ালির ফাঁক দিয়ে রয়েছে ঝড়ে পড়া সোনালী ধান। কীট-পতঙ্গের আক্রমণে অনেক ধানের শীষের শাখা-প্রশাখা ভেঙ্গে মাটিতে পড়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের বউ-ঝি এবং ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে সেই ধান কুঁড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ হাতে ডালি, চাইলন/চালুন, কারো হাতে বাশিলা, ঝাটা আবার কেউ হাতে ব্যাগ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।
অনেকের কাঁধে কোঁদাল আর কারো হাতে শাবল রয়েছে। ছোট ছোট ছেলেদেরও দৃষ্টি কেবল গর্তে, নাড়ার ফাঁক দিয়ে মাটির দিকে ইঁদুরের কেঁটে নিয়ে যাওয়া ধান। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝড়ে পড়া ধান দেখলেই ওদের চোখে-মুখে সোনালী হাসি ফুটে ওঠে। ইঁদুর কৃষকের ক্ষেত থেকে ধানের শীষ কেঁটে নিয়ে আপদকালীন খাদ্য হিসেবে মাটির নিচে গর্তে মজুদ করে রাখে। ধান কুঁড়ানিরা সেই গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাদ্য বের করে নেয়। এছাড়াও মাটি থেকে একটি একটি করে ধান কুঁড়িয়ে মুঠোয় করে ডালায় ভরে। মৌসুমের পুরো সময়টায় তারা এভাবেই ধান কুঁড়িয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই কাজের সঙ্গে গ্রামের অভাবী-হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন ও জড়িয়ে পড়েছেন। তারা প্রত্যেকে দৈনিক ৫/৭কেজি করে ধান সংগ্রহ করছেন।
উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের রুপরামপুর গ্রামের জামিলা বেগম জানান, ‘স্বামী মারা গেছে, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার পরিবার। পুরো বছরে চাল কিনে ভাত খাই, আমি গরীব মানুষ। এ মৌসুমে প্রতিদিন ৪’জন মিলে ১০/১৫ সের ধান পাই। এই দিয়েই আমাদের সারাবছর চলতে হয়। এরপর ও এখন পিঠা খাবার শখ হয়, ধান পামো কোনঠে। তাই এই সময় আসলে ধান খুঁটি।
তারাই শুধু ধান খুঁটেন এমনটা নয়, তাদের মত অন্য ধান কুঁড়ানি ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েরা একই কথা জানান। আবার অনেক ছেলেমেয়েরা তাদের লেখাপড়া কিংবা শীতের কাপড় কেনার জন্যও ধান খুঁটে থাকেন।’
মন্তব্য