মোঃ মোকাররম হোসাইন
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের কালাই প্রাণী সম্পদ দপ্তরে জনবল সংকট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ১১ টি পদের মধ্যে ৮ টি পদই শূন্য রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে খামারীরা কোন সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সরকারিভাবে গবাদি পশুর চিকিৎসা সেবা, কৃত্রিম প্রজনন, টিকাদান ও গরু মোটাতাজা করণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে উপজেলার প্রাই ১৬শ’ টি খামারি দুর্ভোগে পড়েছে। এসব সামলাতে বিপদে পড়তে হচ্ছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রাণী সম্পদ দপ্তরের সহযোগিতা ছাড়া গড়ে উঠেছে হাজারো গরু মোটাতাজাকরণ ও পোল্ট্রি খামার। সরকারি হাসপাতালে পশু ডাক্তারের সংকটে সহযোগিতা না পাওয়ায় রেজিস্ট্রেশন বিহীন নানা হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শে চলছে এসব খামারীদের চিকিৎসা সেবা। ফলে খামারিদের বাড়তি অর্থ ও ভুল পরামর্শে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মঞ্জুরিকৃত ১১ টি পদের মধ্য ৩টি পদে জনবল রয়েছে বাকি ৮ টি পদই রয়েছে শূন্য । ১১ টি পদের মধ্যে যেসব ৮ টি পদগুলি শূন্য রয়েছে তা হলো ভেটেনারি সার্জন ১ জন, উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ৩ জন, কম্পাউন্ডার ১ জন, ড্রেসার ১ জন, অফিস সহকারি ১ জন এবং অফিস সহায়ক ১ জন । উপজেলায় (২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী) গরু দুগ্ধ এবং মোটাতাজাকরন খামার রয়েছে প্রায় ১৬শ টি এবং ছাগল ও ভেড়ার খামার ৩শ ৭৫টি অপরদিকে সোনালী, ব্রয়লার ও লেয়ার মিলে ১৩শ ৪৩টি খামার রয়েছে। এ ছাড়াও দেশি ও শংকর জাতের গরু রয়েছে ১লক্ষ ৫৯হাজার ২২০টি, ছাগল রয়েছে ৭৬হাজার ১২৪টি, ভেড়া রয়েছে ২৫হাজার ২৭৯টি, বিভিন্ন জাতের মুরগী ১৩লক্ষ ৯৬হাজার ১শ ৩০টি, হাঁস রয়েছে ২লক্ষ ১৮হাজার ৫শ,কবুতর রয়েছে ১৯হাজার ৫শ ৬৬টি। এতে চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র ১ জন উপজেলা লাইফস্টক অফিসার , মাঠ সহকারি (কৃত্রিম প্রজনন) ১জন এবং উপসহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ( সম্প্রসারন) ১জন। ফলে ডাক্তার এবং জনবল সংকটের কারনে চাহিদা আনুযায়ী কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে প্রায় খামারি এবং কৃষকরা গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়া ,মুরগী ইত্যাদিতে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। শুধু তাই নয় পদগুলো শূন্য থাকায় নানা সমস্যায় হিমসিম খেতে হচ্ছে দপ্তর ও খামারিদের। শূন্য পদগুলো পূর্ণ হলে সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সব কাঠামো না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
উপজেলার ব্রয়লার মুরগির খামারি জমিনপুর গ্রামের লুৎফর রহমান ও চেঁচুড়িয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, প্রাণিসম্পদ অফিসে কোন কারনে ফোন দিলে তারা শুধু উপদেশ দেন এবং সাথে করনীয় তথ্য দেয় দিয়ে থাকেন কিন্তু, তারা খামারে আসেন না।
গরু খামারি বাসুড়া গ্রামের নয়ন তালুকদার এবং সুমিত কুন্ডু জানান, সমস্যা হলে অভিজ্ঞ ডাক্তার না পাওয়া খামারে গরু অনেকটা কমিয়ে দিয়েছি। আবার বিভিন্ন প্রকার হয়রানির কারনে প্রাণিসম্পদ অফিসে যাওয়া হয়না। তাই সমস্যায় পড়লেও বাধ্য হয়ে পল্লী চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে থাকি।
উপজেলার হাতিয়র গ্রামের শাপলা, কাজী মফিদুল এবং আবু বাশার চঞ্চল জানান, অনেকদিন ধরে প্রাণিসম্পদ অফিসে লোকবল সংকট থাকায় সরকারি ডাঃ দ্বারা গরুর চিকিৎসা সময় মত পাওয়া যায় না। প্রাণিসম্পদকে রক্ষা করতে এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে আরো চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন।
বৈরাগী পাড়া গ্রামের ফারুখ হোসেন ও পুর গ্রামের নূরনবী সরকার বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারনে আমরা বিভিন্ন রোগ প্রতিশেধক ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সময় মত এসব ভ্যাকসিন না দিতে পারায় গবাদিপশু ও প্রাণী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার হাসান আলী লোকবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, অফিসে লোকবল সংকট থাকায় সবকিছু সামলাতে নানা সমস্যায় হিমসিম খেতে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হলে এলাকায় সেবার মান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি খামারি ও সাধারণ মানুষ সময়মত চিকিৎসাসেবা পাবে। এতে করে আর কারো দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
মন্তব্য