এলভী কাজল: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শহরকেন্দ্রিক মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর রমরমা ব্যবসা দীর্ঘদিন যাবত চলমান রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে ঠিকঠাক মতো না পড়ালেও প্রাইভেটে নিজ বাড়িতে ঘড়ির কাঁটা ধরে শিক্ষার্থীদের মনযোগের সাথে পড়াতে ব্যস্ত সময় পার করেন সরকারি কিংবা এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক। এ ক্ষেত্রে প্রতি শিক্ষার্থীকে মাস প্রতি গুনতে হয় ৫০০- ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
সরকারি শিক্ষানীতিতে তোয়াক্কা না করে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শ্রণিকক্ষে এই সব শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কম দেওয়াসহ মানসিকভাবেও চাপ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায় ।
সরোজমিনে দেখা যায়,সরকারি ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবুল আক্তার,ইকরাম হোসেন, সাইদুর রহমান, কান্তা ম্যাডাম,সলিমুননেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গৌতম কুমার,তোতা,মেহেদী হাসান, মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিল্লুর রহমান , রোজিনা আক্তার ও জিয়াউর রহমান এবং মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তরিকুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর রমরমা ব্যাবসা খুলে বসেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রতি ব্যাচে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী পড়ান।
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,স্কুলে ভালোকরে না পড়িয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে প্রাইভেট ব্যবসা পরিচালনা করেন শিক্ষকরা। এ ক্ষেত্রে স্কুলের স্যারের কাছে না পড়ালে নাম্বার কম দেওয়াসহ ফেল করিয়ে দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবেন তবে এক ব্যাচে সর্বোচ্চ ১০ জনকে এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এ বিষয়ে অবগত করতে হবে।ঘোষিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিজ প্রতিষ্ঠানের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে প্রতিমাসে অতিরিক্ত ১২টি ক্লাস নিতে পারবেন শিক্ষকরা। এক্ষেত্রে মহানগর এলাকায় প্রতিটি ক্লাসের জন্য ৩০০ টাকা, জেলা পর্যায়ে ২০০ টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৫০ টাকা নেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করা যাবে না।
এ ব্যাপারে জানতে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসার সাদিয়া জেরিনের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিয়মবর্হিভূতভাবে কেউ যদি প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।
গত ২৯ জুন সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শিক্ষার মানউন্নোয়নে ইউএনও সাদিয়া জেরিন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় অভিভাবকরা প্রাইভেট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখলেও আজও তার কোন সুরহা হয়নি।
ঝিনাইদহ/কালিগঞ্জ
মন্তব্য