মাসুদ লস্কর : সিনিয়র সাংবাদিক
ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। শতবর্ষ পুরাতন একটি বিদ্যাপীঠ। স্কুলে ঢুকতে মুল ফটকে লেখা স্থাপিত ১৯২১ ইংরেজি। প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় বিশ্বনাথ পালের ছেলে সুরেন্দ্র চন্দ্র পাল।
প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকতেই নজর পড়ল প্রধান শিক্ষকদের তালিকা লেখা বোর্ডে, নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রতিষ্ঠা কাল ১৯১৮ ইংরেজি। প্রধান শিক্ষক বিকাশ ভট্রাচার্য (১৯১৮-১৯২২),জানার আগ্রহ থেকে এদিক সেদিক কিছু একটা খুজতে থাকি। হঠাৎ চোখে পড়ল শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিন। প্রধান শিক্ষকের লেখা প্রবন্ধ টি পড়ে রীতিমতো চমকে উঠি। প্রতিষ্ঠা কাল ১৯১৮ ইংরেজি। ৮ জন ছাত্র নিয়ে স্কুলের যাত্রা।শুরুতে স্কুলটির নাম ছিল ছাতিয়াইন M.E SCHOOL যা ১৯২৮ ইং প্রায় (১০)দশ বছর পর্যন্ত বলবত ছিল।
কিন্তু বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির শর্ত পুরন করতে ছাতিয়াইন গ্রামের চন্দ পরিবারের কৃতি সন্তান কামিনী কুমার চন্দ এবং মানিকগঞ্জ জেলার বাসিন্দা বাবু যদু নাথ গুহের যৌথ প্রচেষ্টায় জমিদার সিদ্দেশ্বরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ১৯২৬ ইংরেজি সনে ছাতিয়াইন H,E school এর নামে প্রায় ১৩ কানি পরিমাণ জমি ২২ শে ফেব্রুয়ারী ১৯২৭ ইংরেজি দানকৃত সাফকাবলা করে দেন। ফলে ১ জানুয়ারি ১৯২৯ ইং স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বীকৃতি পায়। তখনই স্কুলের নামকরণ হয় ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ H.E school. প্রশ্ন হল এখানে সিদ্ধেশ্বরী না হয়ে বিশ্বনাথ কেন হল?
এ প্রশ্নের জবাবে এলাকার একাধিক প্রবীন ব্যাক্তির সাথে কথা হয়। জানা যায় বিশ্বনাথ পালের ছেলে সুরেন্দ্র চন্দ্র পাল স্কুলের ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক আসবাবপত্র ক্রয়ে আর্থিক অনুদান দেন। এবং সুরেন্দ্র চন্দ্র পাল তখন কলকাতায় অবস্থান করার কারনে স্কুলের অনুমোদন নিতে সহযোগিতা করেন। এই সুবাদে তিনি স্কুলের নাম ছাতিয়াইন H.E School কে তার পিতার নাম অন্তর্ভুক্ত করে ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ H.E School করতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। জানা যায় পঞ্চাশ দশকের পূর্বেই স্কুলের নামকরণ করা হয় ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ হাইস্কুল নামে। এখানে সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায় এর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার টুকু ও করতে দেখা যায় নি। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে এলাকার একাধিক শিক্ষানুরাগীর অক্লান্ত পরিশ্রম প্রয়োজন। ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও এর ব্যাতিক্রম নয়। সকলের অবদানকে স্বীকার করা উচিৎ। হয়তো সবার নামে স্কুলের নামকরণ সম্ভব নয়। তবে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে স্কুল আজ কলেজে পরিনত তাদের নামে অন্তত ভবন নির্মাণ করে হলেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা যেত। তাই বলে কি জমিদার সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায়ের স্মৃতিটুকু পর্যন্ত মুচে দিয়ে? সভ্য সমাজে এসব কি হচ্ছে? ভাবতে ও লজ্জা লাগে।দায়শোধের সুযোগ কি নেই। কেন এ স্থাপনার নাম ছাতিয়াইন সিদ্ধেশ্বরী স্কুল ও কলেজ নামে নয়!
জন্মসাল এবং জমিদাতার প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধা জানিয়ে আগামী প্রজন্মের কাছে সত্য বচন তুলে ধরার এ প্রজন্মের দাবি। এতে দোষের কিছু নেই। সিদ্ধেশ্বরী রায় প্রসাদ চৌধুরী, এবং ১৯১৮ কে স্বীকৃতির মাঝেই স্বার্থকতা নিহিত বলে বিজ্ঞ জনদের অভিমত।
মন্তব্য