মো: মোকাররম হোসাইন
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত লকমা জমিদার বাড়িটি প্রায় ধংসের পথে । স্থানীয়দের সূত্রে জানা যে ,যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে প্রাচীনকালের সৌন্দর্য মন্ডিত স্বাপত্য লকমা জমিদার বাড়িটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দষ্টি আকর্ষন করবে এতে সরকারর রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি স্বানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে ।
পাঁচবিবি উপজেলা লকমার জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার হতে মাত্র ৪-৫ গজ দুরে উপজেলার সীমান্তবর্তী কড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। চৌধুরী বাড়ির পূর্বপুরুষ আব্দুল হামিদ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি পাঁচবিবিতে বসবাস করতেন বলে জানা যায়।
সীমান্তের পিলার ঘেঁষা ৩ একর জমির উপর পৃথক দুই ভাগে নির্মিত এ জমিদার বাড়ি। লোহার রড ছাড়াই শুধু ইট চুন সুরকী দিয়ে নির্মিত ৩ তলা এ জমিদার বাড়ির এক তলা ইতি মধ্যেই দেবে গেছে মাটির নীচে জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে ২৫/৩০টি কক্ষ। যার ভিতর রয়েছে ছোট ছোট কুঠরি ঘর। হাতিশালা ঘোড়াশালা, কাচারিবাড়ি সবই ছিল এখানে। দেখাশুনা অভাবে আজ শুধু কালের স্বাক্ষী হয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়িটি।
কয়েক মাস আগেও এটি একটি জঙ্গল পরিনত ছিল। তবে বর্তমান এলাকার কিছু উদ্যোগী যুবক এটি পরিস্কার করে আরো আকর্ষনীয় করে তোলেন। এবং পর্যটকদের জন্য সিমেন্ট এর ব্রেঞ্চ ও বসার জায়গা করে দেন। প্রত্যন্ত গ্রাম অবস্থিত সীমান্ত ঘেঁষা নয়নাভিরাম প্রাচীন এ জমিদার বাড়িটি দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি সহায়তার মাধ্যমে এটি সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
জয়পুরহাট -২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি সম্প্রতি তার পিতার কবর জিয়ারত করার সময় এই লকমা এলাকায় আসেন। একই সাথে তিনি পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ীটিও পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন এই পর্যটন কেদ্র লকমা রাজবাড়ীকে সুদর একটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা হবে এবং স্বানীয় আয়মা রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিল্টন- কে বলেন এর জন্য যা-যা করা দরকার তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। এবং প্রশাসনকেও তিনি এই বিষয়ে অবগত করেছেন। এতে অত্র এলাকার গন্যমান্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আনন্দ প্রকাশ করেন।
কড়িয়া গ্রামের সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক আলহাজ্জ নুরুল আমিন সরদার বলেন, চৌধুরী পরিবারের অনেক লোকজন ছিল এবং এর মাঝে কিছু অত্যাচারীও ছিলো তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ করে ঐ চৌধুরী বাড়িতে আকস্মিক ভাবে লোকজনের মত্যু শুরু হলে তখন স্থানীয় এক ফকির বলেন এ বাড়ির কোন লোক বাঁচবেনা,এ বাড়িতে বসবাস করলে সবার বংশ নিপাত হয়ে যাবে। তারপর থেকে সবাই বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করে ও নানা জায়গায় গিয়ে বসবাস শুরু করে। তিনি আরও বলেন যে, ঐ বাড়িতে কোন আত্মীয় স্বজন ভয়ে আসতো না। রাতের বেলা তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারতো না বলে জানায়।
রাতে পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমালে ঘুম থেকে উঠে দেখতেন পূর্ব দিকে মাথা হয়ে আছে। এমন সব ঘটনার পর থেকেই এই বাড়ি পরিতাক্ত্য অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। এখন এই বাড়ি চৌধুরী পরিবারের শুধুই স্মৃতি বহন করে চলছে। এ জমিদার বাড়িকে ঘিরে অনেক কিংবদন্তির কথা শোনা যায়। কথিত আছে চৌধুরী বাড়ির যখন রমরমা অবস্থা, তখন হঠাৎ দেখা দেয় জ্বিন ও সাপের অত্যাচার। ভয়ে শরিকরা আশপাশের গ্রামে বসবাস শুরু করে লকমার জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী ছিলেন হাদী মামুন চৌধুরী।
দুই-আড়াইশ বছর আগে তার সময় নির্মিত হয় এই দালান কাঠা। তিনি নওগাঁ জেলার পোরশার বিখ্যাত জমিদার বাড়ির মেয়েকে বিয় করেন। লকমার জমিদারভুক্ত ছিল বর্তমান ভারতীয় এলাকা জামালপুর মথুরাপুর, গয়েশপুর, চিঙ্গিশপুর, সতনূল, সোনাপাড়া মজাতপুর, ছাড়াও পাঁচবিবি উপজলার বিরাট এলাকা। লকমার দুর্দশা শুরু হয় জমিদারি প্রথা প্রলাপের আগেই। বাধ্য হয়ে বংশধরদের বাস্তভিটা ত্যাগ করতে হয়।
লকমার জমিদার বাড়ির অনেকের ছিল তুলা রাশির ধারী পাতা হাত। এ রাশির লোকের হাত উঠতো ‘ভর হাত কাঁপতে কাঁপতে মাটির নিচে অন্যান্য লোকের গচ্ছিত গুপ্তধনের নির্দিষ্ট স্থান গিয়ে হাত থামতো। গভীর রাতে গোপন এই পাওয়া গুপ্তধন এনে পুঁতে রাখা হতো। এভাবে প্রচুর ধন রত্নের মালিক হয় লকমা জমিদার সদস্যরা। সেই সঙ্গে অজান্তেই বিপদও ডেকে আনা হয়। অপরের গুপ্তধন লকমায় নিয় আসার পরে সর্পরূপী যন্তুও পিছু পিছু চলে আসে। এরপর পরই শুরু হয় সাপের অত্যাচার। প্রথমে বাড়ির মহিলা মহল সর্পাতংক ও পরে বংশের কয়েকজন পাগল হলে তারা মূল ভবন ছেড়ে মসজিদের পাশে নতুন বাড়িঘর করে বসবাসর চেষ্টা করেন।
কিন্তুু সেখানেও সাপের উপদ্রব শুরু হয়। যদিও সাপগুলা কাউকে কামড়াতো না, কিন্তুু ঘুরে বেড়াতো অহরহ। অবশেষে চৌধুরী পরিবার বাস্তভিটা ত্যাগ করে বহুদূরের গ্রামে বসবাস শুরু করে এই কিংবদন্তি কথা শোনা যায় পাঁচবিবি লকমা জমিদার বাড়িটি অতি প্রাচীন একটি স্বাপত্য শৈলী ও দর্শনীয় স্থান। কালের গর্ভে প্রতিটি স্বাপত্য শিল্প বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক। এগুলো ধরে রাখতে হলে যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। স্থানটি যেহেতু দর্শনীয় সেহেতু এটিরও সময়োপযোগী সংরক্ষণ প্রয়োজন। পূর্বে নওগাঁ জেলা ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুর প্রত্নতত্ব বিভাগ এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা পরিদর্শন করে গেছে।
জমিদার বংশর শুধু নাতি-পুতিরাই বেঁচে আছেন তারই মধ্যে ওসমান চৌধুরী পিতা: বতুল চৌধুরী, ভাগ্যের পরিহাসে পাঁচবিবি রেললাইনের পার্শ্বে একটি জায়গায় বসবাস করেন। এবং পাঁচবিবি রাখী মিষ্টান ভান্ডারে কাজ করেন মরহুম আব্দুল হামিদ চৌধুরীর নাতি ওসমান চৌধুরী এলাকাবাসীরা।
মন্তব্য