অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃসাহারাজ মিয়াকে তার গ্রামে ৩০ শতক খাস জমি বন্দোবস্তো দেয়া হলেও তিনি স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে সে জমির দখল ধরে রাখতে পাছেন না। মুক্তিযোদ্ধা পরিবাটিকে ঐ জমি হতে উচ্ছেদ করা হয়েছে।আমরা ইউএনইউ কাছে ও থানায় লিখিত অভিযোগ করে কোন সাহায্য পাই নি।বরং স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ভিন্ন একটি খাস জায়গা বুঝে নিতে বলেন।
গত ২৫ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর ইউপির রসুলপুর গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহরাজ মিয়ার ভুক্তভোগী স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও পুত্র জিয়াউর রহমান কেদতে কাদতে তাদের এসব দুঃখ ও অভিযোগের কথা জানাচ্ছিলেন প্রতিবেদকে।
মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর ইউপির রসুলপুর গ্রামের স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের যোগসাজশে একটি বালু ব্যবসায়ী চক্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মালিকাধীন খাস ভূমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে বরাদ্ধকৃত বীরনিবাস প্রকল্পের গৃহও সে জায়গায় স্থাপন করতে বাধার অভিযোগও পাওয়া গেছে। ওই পরিবার মাধবপুর উপজেলার রসুলপুর মৌজার ৫১ নং জেএলএর ১ নং খতিয়ানের ৫০৫ দাগের ৩০ শতক সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত পান।তাদের এই ভূমি হস্তান্তর করার সময় উপস্থিত ছিলেন মাধবপুর অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নরায়ন চন্দ্র দেব ও তার টিমসহ কয়েকজন, উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাগন ও কয়েকজন ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সে সময় হস্তান্তরের বিধি মোতাবেক তার জমিতে সীমানা নির্ধারনে নির্ধারনী পিলার, লাল নিশান, মুক্তিযুদ্ধের পতাকা ও জাতীয় পতাকা স্থাপনের মাধ্যমে খাস ভূমি হস্তান্তর সম্পন্ন হয়।
সূত্রে জানা যায়,মাস খানেক আগেও ওই জমিতে তারা দখল ছিলেন।এই দাগের জমিতে বসতি করলে স্থানীয় বালু ব্যবসায় বিঘ্নতা সৃষ্টি হয় যে কারনে উচ্ছেদ করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটিকে। এই বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাহারাজ মিয়ার সন্তান জিয়াউর রহমান বিগত ২৩ জুলাই ২০২২ ইং হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক,মাধবপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধবপুরের সার্কেল এসএসপি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনইউ) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরও করেন।অভিযোগগুলার মাধ্যমে তিনি কোন বিচার পান নি জানান জিয়াউর।
জগদীশপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এনাম খান বলেন,তাদের প্রাপ্ত জমির দখল বলবৎ রাখতে আমাদের এলাকার মন্ত্রী মহোদয় আছেও অভিযোগ জানিয়েছি। মন্ত্রী মহোদয় ইউএনওকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন।যার কোন বাস্তবায়ন হয়নি। সার্ভেয়ার কে সাথে নিয়ে তিনি রসুলপুরের পূর্বে ৩৭১ দাগের অন্য একটি টিলাভূমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সেখানেই বীর নিবাস প্রকল্পের গৃহ স্থাপনের পায়তারা করছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে এই অনিয়মের প্রতিবাদ করে আসছি এবং করে যাব। এ অনিয়মের সমাধান না হলে আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মানববন্ধনের ডাক দিব।
দলিল অনুসন্ধান করে দেখা যায়, বন্দোবস্তো মামলা নং ৫/৮-৯ এর মাধ্যমে ৫১৭০/২০১১ ইং দলিল গ্রহীতা শাহারাজ মিয়া কর্তৃক রসুলপুর মৌজার ৫১ নং জেএলএর ১ নং খতিয়ানের ৩৭১ ও ৫০৫ দাগের ৩০ শতক প্রাপ্ত ভূমি আমন শ্রেনী হিসেবে লিখিত হয়েছে।
মাধবপুর সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার শহীদুল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধা সাহারাজ মিয়ার পরিবারকে প্রথমে পূর্ব রসুলপুর ৫০৫ দাগের ভূমি বুঝিয়ে দেয়া হলেও বন্দোবস্থের রসুলপুরের পশ্চিমে ৩৭১ নং দাগে পুনঃনির্ধারণ করেছি।এটা করা বিধি মোতাবেকই হয়েছে। এটাই চূড়ান্ত যা আমাদের ইউএনইউ মহোদয় অবগত আছেন।
এই দলিল বিষয়ে মাধবপুরের সাব-রেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাশ এর কথা বলে জানা যায়,দলিলটির মধ্যে কিছু দুর্বোধ্য জটিল ব্যাপার রয়েছে। এটা নির্ধারন হবে জমির ক্রেস ম্যাপের সার্ভেয়ারের রিপোর্টের মাধ্যমে।
তিনি আরো বলেন,জমির এসএ পর্চায় দেখা যাচ্ছে ৩৭১ দাগ গোচর শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত সেই হিসেবে দলিলে লিখির আমন শ্রেনীর ৫০৫ দাগে ওই জমির অবস্থান হওয়াই অধিক যৌক্তিক। তবে সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক সার্ভেয়ার ও এসিল্যান্ড।
সরেজমিনে মাধবপুর এসিল্যান্ড অফিসে মুক্তিযোদ্ধার বন্দোবস্তো মামলা নং ৫/৮-৯ এর ফাইল অনুসন্ধান করে দেখা যায়,ওই নথিতে অসঙ্গতি রয়েছে।নথিতে পরবর্তী সময়ে ৩৭১ দাগকে কলমে লেখে বসানোর প্রামাণ পাওয়া গেছে । তবে ভূমির ক্রেসম্যাপে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী জিয়াউর রহমান বলেন,ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা আমাদের সাথে অন্যায় করছেন।বিগত ৪ জুলাই ২০২২ ইং দুপুর ১২ ঘটিকায় তাদেরই মাধ্যমে সমজিয়ে দেয়া ৫০৫ দাগের ভূমি তারা ৩৭১ দাগে স্থানান্তরের অপচেষ্টায় লিপ্ত। যা একটি টিলার উপরে। তারা বালু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। আমরা হতদরিদ্র জায়গার অভাবে ৪ মেয়ে সন্তান জগদীশপুর রেলস্টশন ঘুমাই। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক বিচার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে উপহার বীরনিবাস গৃহ আমাদের প্রাপ্ত জমিতে স্থাপন হয় সেই দাবিও জানাই।
এ বিষয়ে মাধবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনইউ)শেখ মইনুল ইসলাম মইনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজেন ব্যানার্জীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে মাধবপুরের ইউএনইউ সাথে কথা বলবেন এবং পুরো বিষয় খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় একাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে ঐ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি প্রশাসনিক বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তহীনতায় হীনতায় কারনে ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
কোন মহলের তোয়াক্কা না করে তাদের প্রাপ্য সঠিক ভূমি দখল হস্তান্তর করে দিলে সরকারের ভাবমূর্তির উন্নতি হবে। প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা আরো মজবুত হবে।
মন্তব্য